1. protidinerawaz@gmail.com : প্রতিদিনের আওয়াজ : প্রতিদিনের আওয়াজ
  2. info@www.protidinerawaj.com : প্রতিদিনের আওয়াজ :
শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:১৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
ক্ষমতায় এলে দাবি আদায়ে জনগণকে রাস্তায় নামতে হবে না: জামায়াত আমির আপনার বোনকে বিহারে আনুন, আমরাই তাকে বাংলাদেশে পাঠাবো— মোদিকে ওয়াইসি হকারদের রাস্তায় বসার কোন সুযোগ নেই: জেলা প্রশাসক ১০ দফা দাবিতে মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে ছাত্রশিবিরের স্মারকলিপি প্রদান সাংবাদিক আবুল  মোহাম্মদ এর মৃত্যুতে, দৈনিক প্রতিদিনের আওয়াজ-এর শোক আমার প্রয়াত বাবার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাই -সৈয়দা আদিবা হোসেন এবার গোলাপগঞ্জের ঘটনায় সিলেটের ডিসিসহ ৫ কর্মকর্তাকে শোকজ সিলেটের তানিম অকালেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন। সরকারি বেতন-রেশন খাস না, গুলি করবি না কেন?’ বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ মহড়া ‘অপারেশন প্যাসিফিক এঞ্জেল’ শুরু

গীর্জায় আঘাত  লাগতেই যুক্তরাষ্ট্রের হুংকার, ৫৮০ মসজিদ গুঁড়িয়ে দিলেও কেন নিশ্চুপ সৌদি

  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫
  • ১৯৯ বার পড়া হয়েছে

মো,রুবেল তালুকদার

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় হলি ফ্যামিলি চার্চে আঘাত হানার পর অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন।

গাজা যুদ্ধ ইতিহাসে শুধু একটি সামরিক সংঘাত নয়-এটি হয়ে দাঁড়িয়েছে ধর্মীয় নিদর্শন ও ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি বৈশ্বিক রাজনীতির পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের এক জ্বলন্ত উদাহরণ।২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরোচিত হামলায় গাজা ভূখণ্ডের প্রায় ৮০ শতাংশ পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মসজিদ-ইসলামের পবিত্রতম, ঐতিহাসিক, আধ্যাত্মিক ও সামাজিক কেন্দ্রবিন্দু।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ও স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের মতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫৮০টি মসজিদ সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস হয়েছে। এর মধ্যে ৩১০টি মসজিদ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে, যেখানে নামাজ আদায় প্রায় অসম্ভব। বায়তুল মোকাদ্দাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের তথ্য মতে, ৪৫টির বেশি মসজিদ ছিল অটোম্যান শাসনামলের-যেগুলো দুই শতাধিক বছর আগের। শিশু ও বৃদ্ধসহ অসংখ্য সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন যখন তারা আশ্রয় নিয়েছিলেন মসজিদটিতে।

এমন দীর্ঘ নিশ্চুপতার মধ্যে বিশ্ব সম্প্রদায় যেন হঠাৎ জেগে উঠে চলতি বছরের ১৭ জুলাই, যখন গাজার হলি ফ্যামিলি চার্চের একাংশ ইসরায়েলের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি গাজার একমাত্র ক্যাথলিক গির্জা। এই হামলায় তিনজন নিহত ও বহু আহত হয়েছেন, যার মধ্যে আছেন যাজক গ্যাব্রিয়েল রোমানেল্লিওতেও। ইসরায়েলি সামরিক প্রতিবেদন বলছে, এটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়া শেলের আঘাত হয়েছে, কিন্তু এটি তারা তদন্ত করে দেখবে।

আরও পড়ুন 

এই ঘটনার পরপরই, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘নেতানিয়াহু আমাকে হতাশ করেছে। তিনি এখন পুরোপুরি সীমা ছাড়িয়ে গেছে।’ রিপাবলিকান সিনেটর র‍্যান্ড পল বলেন, ‘নেতানিয়াহুকে এখন একপ্রকার উন্মাদনা পেয়ে বসেছে, তিনি মানবিকতা ভুলে গিয়ে শুধুমাত্র ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছেন।’

গির্জা আক্রান্ত হলে সেখানে পশ্চিমাদের নেতৃত্বে বিশ্বের নৈতিক অনুভূতি জেগে ওঠে। কিন্তু মসজিদ ধ্বংস হয়ে গেলেও কেউ মুখ খোলে না, এটা ধর্মীয় শ্রেণিবৈষম্য নয় তো কী? অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে-এতদিন একের পর এক মসজিদের ধ্বংসস্তূপ দেখেও কেন কারো বিবেক কাঁপল না?

গাজায় ইসলামের ঐতিহাসিক নিদর্শন ও পবিত্র স্থানগুলোর উপর এমন নির্বিচার হামলার পরেও মুসলিম বিশ্বের নীরবতা হতাশাজনক। বিশেষ করে সৌদি আরব, যাকে ইসলামের মূল ধারক ও বাহক হিসেবে ধরা হয়, তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো অর্থবহ কূটনৈতিক বা রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেয়নি। কিছু দায়সারা বিবৃতি ছাড়া সৌদি আরবের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো প্রতিরোধ বা কূটনৈতিক জোট গঠনের চেষ্টাও দেখা যায়নি।

ইতিহাসবিদ ওয়াহিদ আব্দুল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘যখন গাজার মসজিদ ধ্বংস হয়, তখন মুসলিম বিশ্ব চুপ থাকে; কিন্তু গির্জার দেয়ালে আঘাত হানলে পশ্চিমা বিশ্ব ফেটে পড়ে। এই নৈতিক নির্বাচনী আচরণই প্রমাণ করে, আমাদের কূটনীতি এখনও শোষিত ও নির্লজ্জভাবে একচোখা।’

২০২৩ সালের ৮ ডিসেম্বর গাজার সবচেয়ে প্রাচীন ও বৃহত্তম মসজিদ ‘গ্র্যান্ড ওমারি মসজিদে’ বোমা হামলা চালায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

২০২৩ সালের ৮ ডিসেম্বর গাজার সবচেয়ে প্রাচীন ও বৃহত্তম মসজিদ ‘গ্র্যান্ড ওমারি মসজিদে’ বোমা হামলা চালায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

খ্রিস্টান ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন মূলত ভ্যাটিকান সিটি, জেরুজালেম ও কয়েকটি প্রাচীন ইউরোপীয় শহরে সংরক্ষিত। যুক্তরাষ্ট্রের মূলভূখণ্ডে খ্রিস্টধর্মের সুপরিচিত ‘পবিত্র স্থান’ কম হলেও, রাজনৈতিকভাবে খ্রিস্টান ধর্মের অনুভূতির প্রতি ওয়াশিংটনের প্রতিশ্রুতি খুব বেশি।

এই বৈপরীত্যের কারণ ব্যাখ্যা করে মিডল ইস্ট বিশেষজ্ঞ রবার্ট ম্যাকডোনাল্ড বলেন,‘যুক্তরাষ্ট্রে গির্জা শুধু ধর্ম নয়, ভোটব্যাংকের প্রতিনিধিত্ব করে। মুসলিম মসজিদের ওপর হামলায় তাই তেমন প্রতিক্রিয়া আসে না-কারণ সেখানে ভোটের রাজনীতি নেই, রাজনৈতিক বিনিয়োগ বা দায়বদ্ধতা নেই।’

এমন দ্বিমুখী মানবিকতা আমাদের দাঁড় করায় এক গভীর প্রশ্নের সামনে-মসজিদ ও গির্জা দুটিই কি সৃষ্টিকর্তার আবাসস্থল নয়? তবে কেন এক ধর্মের স্মারক ধ্বংস হলে আন্তর্জাতিক কূটনীতি কাঁদে, আর অন্য ধর্মের ক্ষেত্র নীরব থাকে? ধর্মীয় অনুভূতি কি রাজনৈতিক বিনিয়োগ ও সাংস্কৃতিক কর্তৃত্বের হিসাবের উপর নির্ভর করে?

এই পুরো চিত্র তুলে ধরে একটি নির্মম সত্য-ধর্মীয় নিদর্শনের বিরুদ্ধে সহিংসতায় জাগ্রত বিবেক নয়, বরং তার অবস্থান-রাজনীতি ও ধর্ম নির্ভর করে রাজনৈতিক অঙ্কের উপর। গাজার মসজিদগুলো ধ্বংস হয়, মানুষ পুড়ে যায়, ইতিহাস হারিয়ে যায়-তবু বিশ্ববিবেক কাঁদে না। কিন্তু গির্জার একটি দেয়াল ভাঙলে বিশ্ববিবেক সোচ্চার হয়ে ওঠে। এ কেমন মানবিকতা-যা ধর্ম দেখে অন্যায্য বিচার করে?

গাজায় ইসরায়েলি হামলার ক্ষত প্রতিদিন নতুন করে রক্তাক্ত হয়। কিন্তু এই মানবিক বিপর্যয়ে বিশ্ব বিবেক জাগে নিজেদের স্বার্থে। গির্জায় ক্ষেপণাস্ত্র পড়লে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া তীব্র হয়, অথচ শত শত মসজিদ ধ্বংস হয়ে গেলেও প্রতিবাদের শব্দ শোনা যায় না।

এ প্রসঙ্গে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেন, ‘ইসরায়েল শুধু মানুষ হত্যা করছে না, মুসলিম সভ্যতা ও ইতিহাস মুছে দিচ্ছে। মুসলিম বিশ্বের চুপ করে থাকা এক ধরনের আত্মঘাতী নীরবতা।’ ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ি এক ভাষণে বলেন, ‘গাজায় প্রতিটি মসজিদের ধ্বংস মানে এক একটি কালো অধ্যায়। পশ্চিমের নীরবতা ইসলামবিদ্বেষেরই বহিঃপ্রকাশ।’

মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যান্ড ইমাম শেখ আহমদ আল-তাইয়্যেব বলেন, ‘যেখানে গির্জা আঘাত পায়, সেখানেই পশ্চিমারা জেগে ওঠে। কিন্তু যেখানে মসজিদ ধ্বংস হয়, সেখানে মানবতা ঘুমিয়ে থাকে-এটিই বিশ্বনীতির করুণ পরিণতি।’

যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম পণ্ডিত ও ইতিহাসবিদ ড. ইয়াসির কাদী বলেন, ‘এই হামলা শুধু ভূখণ্ডগত নয়, এটি সাংস্কৃতিক গণহত্যা। ধর্মীয় ইতিহাস মুছে ফেলা হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে।’ লন্ডন ইউনিভার্সিটির ইসলামিক হেরিটেজ গবেষক ড. সালমা হামিদ বলেন, ‘যে পরিমাণ ঐতিহাসিক মসজিদ ধ্বংস হয়েছে গাজায়, তা বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে কোনো মুসলিম ভূখণ্ডে ঘটেনি। সাংস্কৃতিক নিধনের বেছে বেছে নীরবতা মানে এক ধরনের পরোক্ষ অনুমোদন।’

জ্যেষ্ঠ বুদ্ধিজীবী ও মানবাধিকারকর্মীদের কণ্ঠস্বর নোয়াম চমস্কি বলেন, ‘ইসরায়েল আজ শুধু রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড করছে না, বরং পুরো জাতির গৌরবময় স্মৃতি মুছে দিচ্ছে-এটি সুস্পষ্টভাবে সংস্কৃতির উপর বোমাবর্ষণ।’

ধর্মতত্ত্ববিদ ড. কারেন আর্মস্ট্রং বলেন, ‘ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর ধ্বংস শুধু ধর্ম নয়, ইতিহাসের বিরুদ্ধে অপরাধ। কিন্তু আমরা সেই অপরাধ বেছে বেছে দেখি বা এড়িয়ে যাই। গাজার মসজিদ ধ্বংস এবং এর উপর আন্তর্জাতিক নীরবতা প্রমাণ করে-আমাদের মানবাধিকারের পরিধি ধর্ম, অঞ্চল ও রাজনীতির উপর নির্ভরশীল।’

যে বিশ্ব নির্বিচারে শিশু হত্যায় মুখ বন্ধ রাখে, অথচ গির্জার কিছু অংশ ভাঙলে হৈচৈ ফেলে দেয় সেই বিশ্বব্যবস্থায় মানবিকতা হারিয়ে গেছে। ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি সম্মান যদি প্রকৃত হয়, তবে তা হওয়া উচিত সব ধর্মের জন্য সমানভাবে। পবিত্র স্থান মানে কেবল একটি ধর্মের গির্জা নয়, গাজার প্রত্যেকটি মসজিদও মুসলিম সভ্যতার নিদর্শন, জাতির আত্মার আশ্রয়স্থল।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট